জীবনের কোন না কোনো সময়ে ঘুমের সমস্যা প্রায় প্রত্যেকেরই হয়।ঘুমের ব্যঘাত হতে পারে মানসিক বা শারীরিক অনেক কারনে।সব
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য ঘুম বা নিদ্রা একান্ত দরকার।ঘুমের পরিমান
বিভিন্ন জনের বিভন্ন রকম।স্বাভাবিক বা সুস্থ্য মানুষের ঘুমের পরিমান বা
প্রকার বিভিন্ন রকম হতে পারে।
কতটা ঘুমকে স্বাভাবিক বলা যেতে পারে?
স্বাভাবিক
বা সুস্থ্য প্রাপ্ত বয়স্কদের সাধারনতঃ ছয় থেকে আট ঘন্টা ঘুমের
প্রয়োজন।কিন্তু কেউ কেউ ছ’ঘন্টার কম ঘুমিয়েও স্বাভাবিক থাকতে পারে।বয়স
বাড়ার সংগে সংগে ঘুমও কমতে থাকে,এমনকি এর পরিমান চার ঘন্টারও কম হয়ে যেতে
পারে।কারো কারো ঘুমের পরিমান কম লাগে, কারও আবার অনেক বেশী লাগে।
শিশুরা সাধারনতঃ নয় থেকে এগারো ঘন্টা ঘুমোয়।অবশ্য কয়েক মাসের শিশুরা প্রায় দিনের বেশীর ভাগ সময়ই ঘুমাতে পারে।
কেউ কেউ রাতে অনেক দেরিতে ঘুমায় আর সকালে জেগে উঠে বেশী দেরী করে।আবার কেউ কেউ তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যায়, আর ঘুম থেক উঠে খুব সকালে।
ঘুমের এতই প্রয়োজন যে পর পর তিন দিনের বেশী ঘুম না হলে বা ঘুমাতে না দিলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী।তারও বেশী দিন যদি একটুও ঘুম না হয় বা ঘুমাতে না দেওয়া হয় তাহলে মৃত্যু পর্যন্ত্য হতে পারে।
কি কি রকমের ঘুমের সমস্যা হতে পারে?
Ø বেশ কয়েকদিন ধরে কম পরিমানে ঘুম হলে বা ভাল না ঘুম হলে একাগ্রতা ও মনোযোগের অভাব, কাজের ভুল ইত্যাদি,এবং উত্তজনা,টেনশন,অবসন্নতা ও হতে পারে।
Ø ঘুম দেরীতে আসতে পারে।দেরী আধ ঘন্টা থেকে কয়েকঘন্টা পর্য্যন্ত্য হতে পারে।এটার কারন হতে পারে,দুশ্চিন্তার বা টেনশন , ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা বা সাইকোসিস এর জন্যও হতে পারে।
Ø যে কোনো শারীরিক অসুখে, যেমন দেহে কোথাও ব্যথা হলে,বা কোনো ধরনের অসুবিধা হলে,ঘুম না আসতে পারে।এমনকি হাস্পাতালে কোনো কারনে ভর্তি হলে, বা নূতন কোনো জায়গায় গেলেও ঘুমের ব্যঘাত হতে পারে।
Ø রাতের প্রথমদিকে কয়েক ঘন্টা ঘুমের পর ঘুম ভেঙ্গে যায় আর তারপর ঘুম না আসা।এটা সাধারনতঃ হয় ডিপ্রেসন বা বিষন্নতা থাকলে,সাইকোসিসেও হতে পারে।
Ø কারো কারো ঘুমটা বারে বারে ভেঙ্গে যায়,সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হয় সারারাত ঘুমই হয়নি।এরকম অবস্থা হয় টেনশন,মনে উদ্দিগ্ন ভাব থাকলে,ডিপ্রেসন বা বিষন্নতা থাকলে,সাইকোসিস এও হতে পারে।
Ø কেউ কেউ ঘুমের মধ্যে কথা বলে,কেউ দাঁত কড় মড় করে,কেউ ঘুমের মধ্যে বিছানা ছেড়ে উঠে ঘুরে বেড়ায়।এগুলো থাকে সাধারনতঃ টেনশন বা উদ্দিগ্নতা থাকলে।
Ø রাতে ঘুমের মধ্যে ভয়ের স্বপ্ন দেখে ঘুমথেকে জেগে ওঠে, আর স্বপ্নটা মনে করতে পারে,একে বলে নাইটমেয়ার(Nightmare). আর এক ধরনের অবস্থা হয় যখন দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যায়,আর তখন ভয়ের ভাব হয়,বুক ধরফড় করে,ঘাম হয়,আর আবার ঘুমাতে যেতে ভয় লাগে।এতে সকালে উঠে মনে থাকে না রাতের ঘটনা।এই ধরনের অবস্থাকে বলে নাইট-টেরর(Night terror).
Ø ঘুমের মধ্যে বিছানায় পেচ্ছাব করা,এটা সাধারনতঃ পাঁচ ছয় বছরের নীচে শিশুদের মধ্যে হয়।এটা অনেক সময় তার বেশী বয়সেও হতে পারে,যদি তাদের ঠিকমত টয়েলেট ট্রেনিং না দেওয়া হয়, বা এরা খুব যদি টেনশনে ভোগে।অনেক রোগী,যারা ঔষধখেয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তাদের ঘুমই ভাঙ্গে না পেচ্ছাব করার জন্য।
Ø ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা।এটা একটা খুব বড় সমস্যা হয়ে দাড়ায় কোনো কোনো অবস্থায়।খুব জোরে নাকডেকে ঘুমালে,ঘরে অন্যদের ঘুমের অসুবিধা জতে পারে।নাকডাকা একটা শারীরিক সমস্যা।এর জন্য বিবাহ বিচ্ছেদও হয়েছে।
Ø ঘুমের সময় শ্বাসপ্রশ্বাসের অস্বাভাবিকতা হতে পারে যাদের দেহের ওজন অনেক বেশী।ঘুমের মধ্যে এদের শ্বাসের গতি ক্রমশঃ কমতে কমতে একেবারে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।তার পরমুহূর্তে একটা বড় দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে আবার শ্বাসের গতি চলতে থাকে।এই রকম শ্বাসের অবস্থা চক্রাকারে চলতে থাকে।সকালে ঘুম থেকে উঠে এদের পরিশ্রান্ত ভাব লাগে,মনে হয় যেন সারারাত ঘুমই হয়নি।এদের মধ্যে ডিপ্রেসন বা বিষন্নতা রোগ বেশী হয়।
Ø অনেকে হয়ত লক্ষ্য করে থাকবেন কেউ কেউ এমন আছেন যারা কোনো কাজ বা কিছু করার না থাকলে খুব গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায়,হাত পা শিথিল হয়ে ঘাড় কাত হয়ে যায়,এমনকি নাক ডাকতে আরম্ভ করে।ঘুম থেকে তুলে দিলে,আবার সঙ্গে সঙ্গে ফ্রেশ বোধ করে বা ঘুমের ভাব কেটে যায়।এদের রাতের ঘুমটা ভাল হয় না, ঘুমের মধ্যে খুব নাড়াচাড়া করে।
Ø ঠিকমত ঘুম হয় না, অথচ কোনো শারীরিক বা মানসিক কারন নেই,এই অবস্থাও হয় কারও কারও।তারা হয়ত মাত্র কয়েক ঘন্টা ঘুমায়,সেই ঘুমের পরিমানটা সাধারনের জন্য অনেক কম। এদের অন্য কোনো অসুবিধা হয় না, কেবল মনের মধ্যে অস্বস্তি হয় যে তাদের অন্যদের মত ঘুম হয় না।
কি কি কারনে ঘুমের অসুবিধা হয়?
অনেক কারনে ঘুমের ব্যঘাত হতে পারে। যেমন----
১) যে কোনো শারীরিক অসুখে ঘুমের অসুবিধা হতে পারে।দেহে কোনো অংশে ব্যথা থাকলে, বা কোনো অস্বস্তি থাকলে ঘুম আসতে দেরী হতে পারে।
২)বিভিন্ন রকম মানসিক রোগে ঘুমের ব্যঘাত হয়, যেমন, টেনশন বা দুঃশ্চিন্তা,মনের বিষন্নতা ভাব,যে কোনো সাইকোসিস হলে,শিশুদের ক্ষেত্রে ছটফটে ও অমনোযোগী হলে,ইত্যাদি।
৩) ডিপ্রেসন,ওবেসিটি বা দেহের অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি,আর ঘুমের সমস্যা এই তিনটে একসঙ্গে থাকে।ডিপ্রেসন থেকে অত্যধিক খাওয়ার প্রবনতা হয়,বেশী ঘুমায়, তার জন্য দেহের ওজনও বেশী বৃদ্ধি পায়।
৪)নানা ধরনের মাদকদ্রব্য ব্যবহারে ঘুমের অসুবিধা হয়।গাঁজা,কোকেন,প্রত্যেক দিন মদ্যপান করলে ঘুমের অসুবিধা হয়।গাঁজা, কোকেন নিলে ঘুম অনেক কমে যায়, ঘুম এলেও ভাঙ্গা ভাঙ্গা হয়।মদ্যপান করলে প্রথম কয়েক মাস ঘুম ঠিক হয়, তারপর বেশীদিন ধরে পান করতে থাকলে, ঘুম বার বার ভেঙ্গে যায়,আর সকালে মনে হয় যেন ঘুমই হয়নি।ঘুমের ঔষধ প্রত্যেক দিন ব্যবহার করলে,পরের দিকে ঘুম ঠিকমত হয় না, তখন আবার ঔষধের ডোজ বাড়াতে হয়।
৫)খুব বেশী চা, কফি, এমনকি কিছু কিছু ঠান্ডা হালকা পানীয় আছে তাতে কেফিন(Caffeine) থাকার জন্য ঘুমের আগে পান করলে ঘুমের ব্যঘাত হতে পারে।বেশী ধুম পান করলেও ঘুমের অসুবিধা হতে পারে।
৬) যারা রাতে কাজ করেন বা সিফটে কাজ করেন, তাদেরও ঘুমের অসুবিধা হতে পারে।এমনকি কাজের চাপে, বা পরিক্ষার পড়ার চাপে ঘুমের আসুবিধা হতে পারে।যদি কেউ রাতে কাজ করে বা পড়াশোনা করার জন্য রাতে না ঘুমায় তাদের দিনের বেলায় সবসময় ঘুম ঘুম ভাব হয়।
৭) প্লেনে এক সময়ের জোন থেকে অন্য জোনে ট্রাভেল করলে ঘুমের ব্যঘাত হয়।যদি দুই জায়গার মধ্যে সময়ের ব্যবধান ছ’ঘন্টার বেশী হয় তা’হলে এটা হয়।আর স্বাভাবিক ঘুম হতে প্রায় এক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।এই অবস্থার জন্য সাধারনতঃ কোনো চিকিৎসা করা হয় না।নুতন জায়গায় যে সময় ঘুমানোর দরকার সেই সময়েই ঘুমতে যাওয়া দরকার।ধীরে ধীরে ঘুমটা ঠিক সময়ে আসতে থাকে আর ঠিক সময়ে ভাঙ্গতে থাকে।
ঘুমের অসুবিধা হলে কি করা দরকার?
যদি ঘুমের অসুবিধা হওয়ার কারন জানা যায় তবে তার সমাধান করা সহজ হয়।শারীরিক কারনে ঘুম না হলে, সেগুলির জন্য ডাক্তার দেখান দরকার।
যদি মানসিক কারনে ঘুম না হয়, যেমন টেনশন বা দুশ্চিন্তা,মনের মধ্যে সব সময় উদ্দিগ্ন ভাব, বা মনের বিষন্নতা বা ডিপ্রেসন ভাব,সাইকোসিস জাতীয় কোনো মানসিক রোগ হয় তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।অনেকে মনে করেন হয়ত রোগীকে ঘুমের ঔষধদিলে সেগুলো ঠিক হয়ে যাবে।তা কিন্তু ঠিক হবে না, কারন ডিপ্রেসনের জন্য অ্যান্টিডিপ্রেসন্ট লাগবে,সাইকোসিসের জন্য অ্যান্টিসাইকোটিক মেডিসিন লাগবে ইত্যাদি।
ঘুমের ঔষধ না খেয়ে কি ভাবে স্বাভাবিক ঘুম হতে পারে?
যদি কোনো বিশেষ শারীরিক বা মানসিক রোগ না থাকে,অথচ ঘুম ঠিকমত হচ্ছে না তাহলে নীচের নিয়মগুলো করলে স্বাভাবিক ভাবে ঘুম হতে পারে---
Ø চেষ্টা করবেন সব সময় একই সময় ঘুমতে যাওয়া,আর এক সময়ে ঘুম থেকে ওঠা।
Ø ঘুমের সমস্যা হওয়ার আগে যতক্ষন ঘুমাতেন ততক্ষনই ঘুমানোর চেষ্টা করবেন।
Ø দিনের বেলায় ঘুমাবেন না।
Ø দিনের প্রথম দিকে কিছু শারীরিক চর্চা করবেন, যেমন আধঘন্টা বা পয়তাল্লিশ মিনিট দ্রুত গতিতে হাঁটা বা দৌড়ান।সপ্তাহে অন্ততঃ পাঁচ দিন বা ছ’দিন করবেন।
Ø রাতে শোবার আগে টিভি দেখা, বা ভিডিও গেম খেলা,বা ইত্যাদি না করলে ভাল হয় , কারন এতে ব্রেন ও মনকে উত্তেজিত করে দেয় তখন ঘুম আসতে দেরী হয়।এর পরিবর্তে হালকা গল্পের বই পড়তে পারেন বা রেডিও শুনতে পারেন।
Ø সন্ধ্যের প্রথমদিকে রাতের খাওয়া খেয়ে নেবেন।শুতে যাওয়ার আগে খুব পেট ভরে খেয়ে শুতে যাবেন না,তাহলে ঘুমের ব্যঘাত হতে পারে।
Ø শুতে যাওয়ার আগে কিছু একটা কাজ রুটিন মাফিক করলে ভাল হয়।যেমন নিজের বিছানা নিজেই ঠিক করে নেওয়া,শোবার জামাকাপড় পরা,ইত্যাদি।
Ø শোবার আগে যদি কোনো যৌনক্রিয়া করা হয় তাহলে ঘুমে তাড়াতাড়ি আসে ও ঘুম ভাল হয়।
উপরের ঐগুলি বেশ কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস করে যেতে হবে।যদি তাতে কাজ না হয়, তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
ঘুমের ঔষধ সম্বন্ধে এইগুলি বিশেষ করে মনে রাখা দরকার
Ø ঘুমের ঔষধ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নেওয়া উচিৎ।
Ø ঘুমের ঔষধ কয়েক সপ্তাহ থেকে, মাস খানেকের বেশী নিলে ঘুমের ঔষধের উপর নির্ভরতা হয়ে যাবে।একবার ওটা হলে পরে আরো বেশী ডোজে ঔষধ লাগবে ঘুমের জন্য।
Ø একবার ঘুমের ঔষধে আসক্তি হলে, এটা বন্ধকরার জন্য তখন ডাক্তারের সাহায্য লাগতে পারে,কারন ঔষধ বন্ধ করলেই অনিদ্রা,টেনশন,মনের মধ্যে চঞ্চলতা ভাব, এমনকি ফিট হতে পারে।
Ø ঘুমের ঔষধ নিলে, অ্যালকোহল বা মদ পান করা উচিত, কারন তাতে দুটোর অ্যাকশান মিলে বেশী হয়।
Ø ঘুমের ঔষধ খেয়ে গাড়ী চালান বা কোনো মেশিনের কাজ করবেন না, তাতে দূর্ঘটনা হবার সম্ভাবনা খুব বেশী হয়।ঘুমের ঔষধ খেলে মনের একাগ্রতা,মনযোগ,এমনকি স্মৃতি শক্তির উপরও প্রভাব ফেলে।সেজন্য যতক্ষন না পুরোপুরি সজাগ হচ্ছেন, ততক্ষন ঔ সব করবেন না।
Ø যদি কারো মনে বিষন্নতা ভাব বা ডিপ্রেসন হয়, বা কেউ যদি আত্মহত্যার কথা বলে, তাদেরকে কাছে ঘুমের ঔষধ ও অন্যান্য ঔষধ দেবেন না।প্রত্যেক ডোজের ঔষধ প্রত্যেক দিন খাওয়ার সময় দেবেন,এবং পারলে তখনি যেন রোগী ঔষধ খেয়ে নেন। বাকি ঔষধ রোগীর আওতার বাইরে রাখবেন।ঘুমের ঔষধ খেয়েই অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
কোন ঘুমের ঔষধ সবচেয়ে ভাল?
এখনো কোনো ঘুমের ঔষধ বেরয়নি যেটায় নেশা বা অ্যাডিকশন হয় না বা তার কোনো পার্শপ্রতিক্রিয়া নেই।
সুতরাং এইটা দেখতে গিয়ে নিম্নলিখিত বিষয় গুলি বিবেচনা করা দরকারঃ
(১)কেউ কেউ ঘুমের ঔষধ ভাল সহ্য করতে পারে,কারো কারো পার্শপ্রতিক্রিয়া অনেক বেশী হয়।প্রত্যেকের সহ্য করার ক্ষমতা বিভিন্ন।তাছাড়া এটা নির্ভর করে আরো কোনো রোগ আছে কিনা তার উপর।যেমন কিডনি, লিভার,এর অসুখ থাকলে,বা মাথায় আঘাত লাগলে,ঘুমের ঔষধের পার্শপ্রতিক্রিয়া বেশী হয়।
(২)শিশুদের ও বৃদ্ধ বয়সের রোগীদের কম পরিমানে ঔষধ দেওয়া হয়,কারন তাদের বেশী পার্শপ্রতিক্রিয়া হয়।প্রাপ্ত বয়স্ক বা যুবক বয়সে ঘুমের ঔষধের সহ্য করার ক্ষমতা বেশী থাকে।
(৩)সন্তানসম্ভবা মেয়েদের ক্ষেত্রে খুব সাবধানে ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়,বিশেষ করে শেষ কয়েক মাসের গর্ভাবস্থায়।শেষ মাসে গর্ভবতী মা যদি ঘুমের ঔষধ খায় তাহলে গর্ভস্থ শিশু প্রসবের পর উইথড্রয়ালের উপসর্গ হয়।মা যদি ঘুমের ঔষধ খায় এবং শিশু মায়ের বুকের দুধ খেলে শিশুরও ঘুমের ঔষধের প্রতিক্রিয়া হয়।
(৪)যারা আরো কোনো ঔষধ খান সেই সব ঔষধের সাথে ঘুমের ঔষধের অ্যাকশান মিলে বেশী ঘুম হতে পারে বা পার্শপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।যাদের অন্যকিছুর নেশা আছে, যেমন মদ্যপানে আসক্ত ব্যক্তি যদি ঘুমের ঔষধ চায় তাহলে না দেওয়া উচিৎ কারন তাদের ঐ ঔষধেও নেশা হয়ে যাবে।
(৫)নীচের ঔষধগুলির মধ্যে ট্রায়যোলাম অনেক সময় শারীরিক ও মানসিক উত্তেজনা সৃষ্টি করে, আর যোলপিডেম ও ট্রায়াযোলাম দুটোই স্মৃতিশক্তির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
নিম্নলিখিত ঔষধগুলি ঘুমের জন্য ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয়ঃ
ডায়াযেপাম(Diazepam),ক্লোরডায়াযেপক্সাইড(Chlordiazepoxide),লোরাযেপাম(Lorazepam),ক্লোনাযেপাম(Clonazepam),নাইট্রাযেপাম(Nitrazepam),অক্সাযেপাম(Oxazepam),ফুরাযেপাম(Flurazepam),হ্যালাযেপাম(Halazepam),টেমাযেপাম(Temazepam)।
উপরের ঔষধগুলি সাধারনতঃ ঘুমের জন্য ব্যবহার করা যায়,নীচের গুলোর মধ্যে অ্যালপ্রাযোলাম,টেনশন বা প্যানিক অ্যাটাকে ব্যবহার করা যেতে পারে।বাকিগুলো অন্য কাজে ব্যবহার করা হয়।
অ্যালপ্রাযোলাম(Alprazolam),এস্টাযোলাম(Estazolam),ট্রায়াযোলাম(Triazolam),মিডাযোলাম(Midazolam),কোয়াযেপাম(Quazepam)ইত্যাদি।
এছাড়া আরেকটা গ্রুপ ঔষধ এখন পাওয়া যায় যার নাকি নেশা করার প্রবনতা অনেক কম। সেগুলি হল,যোপিক্লোন(Zopiclone),যোলপিডেম(Zolpidem),যালেপলন(Zaleplon)ইত্যাদি।
উপরের প্রত্যেক ঔষধের অপব্যবহার বা নেশা করার প্রবনতা কম বেশী করে আছে।
সবচেয়ে ভাল ঘুমের ঔষধ বলা খুব শক্ত উপরের কারনগুলির জন্য।তবে আমার মনে হয় লোরাযেপামই বোধহয় সবচেয়ে ভাল। কারন, এটাতে ঘুম সাধারনতঃ ১৫ থেকে আধঘন্টার মধ্যে আসে,ঘুমটা ৬ থেকে ৮ ঘন্টা পর্যন্ত্য হয়,সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর আর ঘুমের ভাব বিশেষ থাকে না।এটা লিভার খারাপ থাকলেও দেওয়া যেতে পারে,অবশ্য কিডনীর গন্ডগোলে সাবধানে দিতে হয়।
আর যোপিক্লোন ঘুমের ঔষধটা সেদিক থেকে হয়ত লোরাযেপাম এর মত বা তার থেকে ভাল বলা যেতে পারে।
মনে রাখবেন সঠিক ঘুমের ঔষধের জন্য ডাক্তারই আপনাকে ঠিক পরামর্শ দিতে পারে।
আরো জানার জন্য দেখুনঃ www.csrmh.com
কতটা ঘুমকে স্বাভাবিক বলা যেতে পারে?

শিশুরা সাধারনতঃ নয় থেকে এগারো ঘন্টা ঘুমোয়।অবশ্য কয়েক মাসের শিশুরা প্রায় দিনের বেশীর ভাগ সময়ই ঘুমাতে পারে।
কেউ কেউ রাতে অনেক দেরিতে ঘুমায় আর সকালে জেগে উঠে বেশী দেরী করে।আবার কেউ কেউ তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যায়, আর ঘুম থেক উঠে খুব সকালে।
ঘুমের এতই প্রয়োজন যে পর পর তিন দিনের বেশী ঘুম না হলে বা ঘুমাতে না দিলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী।তারও বেশী দিন যদি একটুও ঘুম না হয় বা ঘুমাতে না দেওয়া হয় তাহলে মৃত্যু পর্যন্ত্য হতে পারে।
কি কি রকমের ঘুমের সমস্যা হতে পারে?
Ø বেশ কয়েকদিন ধরে কম পরিমানে ঘুম হলে বা ভাল না ঘুম হলে একাগ্রতা ও মনোযোগের অভাব, কাজের ভুল ইত্যাদি,এবং উত্তজনা,টেনশন,অবসন্নতা ও হতে পারে।
Ø ঘুম দেরীতে আসতে পারে।দেরী আধ ঘন্টা থেকে কয়েকঘন্টা পর্য্যন্ত্য হতে পারে।এটার কারন হতে পারে,দুশ্চিন্তার বা টেনশন , ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা বা সাইকোসিস এর জন্যও হতে পারে।
Ø যে কোনো শারীরিক অসুখে, যেমন দেহে কোথাও ব্যথা হলে,বা কোনো ধরনের অসুবিধা হলে,ঘুম না আসতে পারে।এমনকি হাস্পাতালে কোনো কারনে ভর্তি হলে, বা নূতন কোনো জায়গায় গেলেও ঘুমের ব্যঘাত হতে পারে।
Ø রাতের প্রথমদিকে কয়েক ঘন্টা ঘুমের পর ঘুম ভেঙ্গে যায় আর তারপর ঘুম না আসা।এটা সাধারনতঃ হয় ডিপ্রেসন বা বিষন্নতা থাকলে,সাইকোসিসেও হতে পারে।
Ø কারো কারো ঘুমটা বারে বারে ভেঙ্গে যায়,সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হয় সারারাত ঘুমই হয়নি।এরকম অবস্থা হয় টেনশন,মনে উদ্দিগ্ন ভাব থাকলে,ডিপ্রেসন বা বিষন্নতা থাকলে,সাইকোসিস এও হতে পারে।
Ø কেউ কেউ ঘুমের মধ্যে কথা বলে,কেউ দাঁত কড় মড় করে,কেউ ঘুমের মধ্যে বিছানা ছেড়ে উঠে ঘুরে বেড়ায়।এগুলো থাকে সাধারনতঃ টেনশন বা উদ্দিগ্নতা থাকলে।
Ø রাতে ঘুমের মধ্যে ভয়ের স্বপ্ন দেখে ঘুমথেকে জেগে ওঠে, আর স্বপ্নটা মনে করতে পারে,একে বলে নাইটমেয়ার(Nightmare). আর এক ধরনের অবস্থা হয় যখন দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যায়,আর তখন ভয়ের ভাব হয়,বুক ধরফড় করে,ঘাম হয়,আর আবার ঘুমাতে যেতে ভয় লাগে।এতে সকালে উঠে মনে থাকে না রাতের ঘটনা।এই ধরনের অবস্থাকে বলে নাইট-টেরর(Night terror).
Ø ঘুমের মধ্যে বিছানায় পেচ্ছাব করা,এটা সাধারনতঃ পাঁচ ছয় বছরের নীচে শিশুদের মধ্যে হয়।এটা অনেক সময় তার বেশী বয়সেও হতে পারে,যদি তাদের ঠিকমত টয়েলেট ট্রেনিং না দেওয়া হয়, বা এরা খুব যদি টেনশনে ভোগে।অনেক রোগী,যারা ঔষধখেয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তাদের ঘুমই ভাঙ্গে না পেচ্ছাব করার জন্য।
Ø ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা।এটা একটা খুব বড় সমস্যা হয়ে দাড়ায় কোনো কোনো অবস্থায়।খুব জোরে নাকডেকে ঘুমালে,ঘরে অন্যদের ঘুমের অসুবিধা জতে পারে।নাকডাকা একটা শারীরিক সমস্যা।এর জন্য বিবাহ বিচ্ছেদও হয়েছে।
Ø ঘুমের সময় শ্বাসপ্রশ্বাসের অস্বাভাবিকতা হতে পারে যাদের দেহের ওজন অনেক বেশী।ঘুমের মধ্যে এদের শ্বাসের গতি ক্রমশঃ কমতে কমতে একেবারে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।তার পরমুহূর্তে একটা বড় দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে আবার শ্বাসের গতি চলতে থাকে।এই রকম শ্বাসের অবস্থা চক্রাকারে চলতে থাকে।সকালে ঘুম থেকে উঠে এদের পরিশ্রান্ত ভাব লাগে,মনে হয় যেন সারারাত ঘুমই হয়নি।এদের মধ্যে ডিপ্রেসন বা বিষন্নতা রোগ বেশী হয়।
Ø অনেকে হয়ত লক্ষ্য করে থাকবেন কেউ কেউ এমন আছেন যারা কোনো কাজ বা কিছু করার না থাকলে খুব গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায়,হাত পা শিথিল হয়ে ঘাড় কাত হয়ে যায়,এমনকি নাক ডাকতে আরম্ভ করে।ঘুম থেকে তুলে দিলে,আবার সঙ্গে সঙ্গে ফ্রেশ বোধ করে বা ঘুমের ভাব কেটে যায়।এদের রাতের ঘুমটা ভাল হয় না, ঘুমের মধ্যে খুব নাড়াচাড়া করে।
Ø ঠিকমত ঘুম হয় না, অথচ কোনো শারীরিক বা মানসিক কারন নেই,এই অবস্থাও হয় কারও কারও।তারা হয়ত মাত্র কয়েক ঘন্টা ঘুমায়,সেই ঘুমের পরিমানটা সাধারনের জন্য অনেক কম। এদের অন্য কোনো অসুবিধা হয় না, কেবল মনের মধ্যে অস্বস্তি হয় যে তাদের অন্যদের মত ঘুম হয় না।
কি কি কারনে ঘুমের অসুবিধা হয়?
অনেক কারনে ঘুমের ব্যঘাত হতে পারে। যেমন----
১) যে কোনো শারীরিক অসুখে ঘুমের অসুবিধা হতে পারে।দেহে কোনো অংশে ব্যথা থাকলে, বা কোনো অস্বস্তি থাকলে ঘুম আসতে দেরী হতে পারে।
২)বিভিন্ন রকম মানসিক রোগে ঘুমের ব্যঘাত হয়, যেমন, টেনশন বা দুঃশ্চিন্তা,মনের বিষন্নতা ভাব,যে কোনো সাইকোসিস হলে,শিশুদের ক্ষেত্রে ছটফটে ও অমনোযোগী হলে,ইত্যাদি।
৩) ডিপ্রেসন,ওবেসিটি বা দেহের অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি,আর ঘুমের সমস্যা এই তিনটে একসঙ্গে থাকে।ডিপ্রেসন থেকে অত্যধিক খাওয়ার প্রবনতা হয়,বেশী ঘুমায়, তার জন্য দেহের ওজনও বেশী বৃদ্ধি পায়।
৪)নানা ধরনের মাদকদ্রব্য ব্যবহারে ঘুমের অসুবিধা হয়।গাঁজা,কোকেন,প্রত্যেক দিন মদ্যপান করলে ঘুমের অসুবিধা হয়।গাঁজা, কোকেন নিলে ঘুম অনেক কমে যায়, ঘুম এলেও ভাঙ্গা ভাঙ্গা হয়।মদ্যপান করলে প্রথম কয়েক মাস ঘুম ঠিক হয়, তারপর বেশীদিন ধরে পান করতে থাকলে, ঘুম বার বার ভেঙ্গে যায়,আর সকালে মনে হয় যেন ঘুমই হয়নি।ঘুমের ঔষধ প্রত্যেক দিন ব্যবহার করলে,পরের দিকে ঘুম ঠিকমত হয় না, তখন আবার ঔষধের ডোজ বাড়াতে হয়।
৫)খুব বেশী চা, কফি, এমনকি কিছু কিছু ঠান্ডা হালকা পানীয় আছে তাতে কেফিন(Caffeine) থাকার জন্য ঘুমের আগে পান করলে ঘুমের ব্যঘাত হতে পারে।বেশী ধুম পান করলেও ঘুমের অসুবিধা হতে পারে।
৬) যারা রাতে কাজ করেন বা সিফটে কাজ করেন, তাদেরও ঘুমের অসুবিধা হতে পারে।এমনকি কাজের চাপে, বা পরিক্ষার পড়ার চাপে ঘুমের আসুবিধা হতে পারে।যদি কেউ রাতে কাজ করে বা পড়াশোনা করার জন্য রাতে না ঘুমায় তাদের দিনের বেলায় সবসময় ঘুম ঘুম ভাব হয়।
৭) প্লেনে এক সময়ের জোন থেকে অন্য জোনে ট্রাভেল করলে ঘুমের ব্যঘাত হয়।যদি দুই জায়গার মধ্যে সময়ের ব্যবধান ছ’ঘন্টার বেশী হয় তা’হলে এটা হয়।আর স্বাভাবিক ঘুম হতে প্রায় এক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।এই অবস্থার জন্য সাধারনতঃ কোনো চিকিৎসা করা হয় না।নুতন জায়গায় যে সময় ঘুমানোর দরকার সেই সময়েই ঘুমতে যাওয়া দরকার।ধীরে ধীরে ঘুমটা ঠিক সময়ে আসতে থাকে আর ঠিক সময়ে ভাঙ্গতে থাকে।
ঘুমের অসুবিধা হলে কি করা দরকার?
যদি ঘুমের অসুবিধা হওয়ার কারন জানা যায় তবে তার সমাধান করা সহজ হয়।শারীরিক কারনে ঘুম না হলে, সেগুলির জন্য ডাক্তার দেখান দরকার।
যদি মানসিক কারনে ঘুম না হয়, যেমন টেনশন বা দুশ্চিন্তা,মনের মধ্যে সব সময় উদ্দিগ্ন ভাব, বা মনের বিষন্নতা বা ডিপ্রেসন ভাব,সাইকোসিস জাতীয় কোনো মানসিক রোগ হয় তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।অনেকে মনে করেন হয়ত রোগীকে ঘুমের ঔষধদিলে সেগুলো ঠিক হয়ে যাবে।তা কিন্তু ঠিক হবে না, কারন ডিপ্রেসনের জন্য অ্যান্টিডিপ্রেসন্ট লাগবে,সাইকোসিসের জন্য অ্যান্টিসাইকোটিক মেডিসিন লাগবে ইত্যাদি।
ঘুমের ঔষধ না খেয়ে কি ভাবে স্বাভাবিক ঘুম হতে পারে?
যদি কোনো বিশেষ শারীরিক বা মানসিক রোগ না থাকে,অথচ ঘুম ঠিকমত হচ্ছে না তাহলে নীচের নিয়মগুলো করলে স্বাভাবিক ভাবে ঘুম হতে পারে---
Ø চেষ্টা করবেন সব সময় একই সময় ঘুমতে যাওয়া,আর এক সময়ে ঘুম থেকে ওঠা।
Ø ঘুমের সমস্যা হওয়ার আগে যতক্ষন ঘুমাতেন ততক্ষনই ঘুমানোর চেষ্টা করবেন।
Ø দিনের বেলায় ঘুমাবেন না।
Ø দিনের প্রথম দিকে কিছু শারীরিক চর্চা করবেন, যেমন আধঘন্টা বা পয়তাল্লিশ মিনিট দ্রুত গতিতে হাঁটা বা দৌড়ান।সপ্তাহে অন্ততঃ পাঁচ দিন বা ছ’দিন করবেন।
Ø রাতে শোবার আগে টিভি দেখা, বা ভিডিও গেম খেলা,বা ইত্যাদি না করলে ভাল হয় , কারন এতে ব্রেন ও মনকে উত্তেজিত করে দেয় তখন ঘুম আসতে দেরী হয়।এর পরিবর্তে হালকা গল্পের বই পড়তে পারেন বা রেডিও শুনতে পারেন।
Ø সন্ধ্যের প্রথমদিকে রাতের খাওয়া খেয়ে নেবেন।শুতে যাওয়ার আগে খুব পেট ভরে খেয়ে শুতে যাবেন না,তাহলে ঘুমের ব্যঘাত হতে পারে।
Ø শুতে যাওয়ার আগে কিছু একটা কাজ রুটিন মাফিক করলে ভাল হয়।যেমন নিজের বিছানা নিজেই ঠিক করে নেওয়া,শোবার জামাকাপড় পরা,ইত্যাদি।
Ø শোবার আগে যদি কোনো যৌনক্রিয়া করা হয় তাহলে ঘুমে তাড়াতাড়ি আসে ও ঘুম ভাল হয়।
উপরের ঐগুলি বেশ কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস করে যেতে হবে।যদি তাতে কাজ না হয়, তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
ঘুমের ঔষধ সম্বন্ধে এইগুলি বিশেষ করে মনে রাখা দরকার

Ø ঘুমের ঔষধ কয়েক সপ্তাহ থেকে, মাস খানেকের বেশী নিলে ঘুমের ঔষধের উপর নির্ভরতা হয়ে যাবে।একবার ওটা হলে পরে আরো বেশী ডোজে ঔষধ লাগবে ঘুমের জন্য।
Ø একবার ঘুমের ঔষধে আসক্তি হলে, এটা বন্ধকরার জন্য তখন ডাক্তারের সাহায্য লাগতে পারে,কারন ঔষধ বন্ধ করলেই অনিদ্রা,টেনশন,মনের মধ্যে চঞ্চলতা ভাব, এমনকি ফিট হতে পারে।
Ø ঘুমের ঔষধ নিলে, অ্যালকোহল বা মদ পান করা উচিত, কারন তাতে দুটোর অ্যাকশান মিলে বেশী হয়।
Ø ঘুমের ঔষধ খেয়ে গাড়ী চালান বা কোনো মেশিনের কাজ করবেন না, তাতে দূর্ঘটনা হবার সম্ভাবনা খুব বেশী হয়।ঘুমের ঔষধ খেলে মনের একাগ্রতা,মনযোগ,এমনকি স্মৃতি শক্তির উপরও প্রভাব ফেলে।সেজন্য যতক্ষন না পুরোপুরি সজাগ হচ্ছেন, ততক্ষন ঔ সব করবেন না।
Ø যদি কারো মনে বিষন্নতা ভাব বা ডিপ্রেসন হয়, বা কেউ যদি আত্মহত্যার কথা বলে, তাদেরকে কাছে ঘুমের ঔষধ ও অন্যান্য ঔষধ দেবেন না।প্রত্যেক ডোজের ঔষধ প্রত্যেক দিন খাওয়ার সময় দেবেন,এবং পারলে তখনি যেন রোগী ঔষধ খেয়ে নেন। বাকি ঔষধ রোগীর আওতার বাইরে রাখবেন।ঘুমের ঔষধ খেয়েই অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
কোন ঘুমের ঔষধ সবচেয়ে ভাল?
এখনো কোনো ঘুমের ঔষধ বেরয়নি যেটায় নেশা বা অ্যাডিকশন হয় না বা তার কোনো পার্শপ্রতিক্রিয়া নেই।
সুতরাং এইটা দেখতে গিয়ে নিম্নলিখিত বিষয় গুলি বিবেচনা করা দরকারঃ
(১)কেউ কেউ ঘুমের ঔষধ ভাল সহ্য করতে পারে,কারো কারো পার্শপ্রতিক্রিয়া অনেক বেশী হয়।প্রত্যেকের সহ্য করার ক্ষমতা বিভিন্ন।তাছাড়া এটা নির্ভর করে আরো কোনো রোগ আছে কিনা তার উপর।যেমন কিডনি, লিভার,এর অসুখ থাকলে,বা মাথায় আঘাত লাগলে,ঘুমের ঔষধের পার্শপ্রতিক্রিয়া বেশী হয়।
(২)শিশুদের ও বৃদ্ধ বয়সের রোগীদের কম পরিমানে ঔষধ দেওয়া হয়,কারন তাদের বেশী পার্শপ্রতিক্রিয়া হয়।প্রাপ্ত বয়স্ক বা যুবক বয়সে ঘুমের ঔষধের সহ্য করার ক্ষমতা বেশী থাকে।
(৩)সন্তানসম্ভবা মেয়েদের ক্ষেত্রে খুব সাবধানে ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়,বিশেষ করে শেষ কয়েক মাসের গর্ভাবস্থায়।শেষ মাসে গর্ভবতী মা যদি ঘুমের ঔষধ খায় তাহলে গর্ভস্থ শিশু প্রসবের পর উইথড্রয়ালের উপসর্গ হয়।মা যদি ঘুমের ঔষধ খায় এবং শিশু মায়ের বুকের দুধ খেলে শিশুরও ঘুমের ঔষধের প্রতিক্রিয়া হয়।
(৪)যারা আরো কোনো ঔষধ খান সেই সব ঔষধের সাথে ঘুমের ঔষধের অ্যাকশান মিলে বেশী ঘুম হতে পারে বা পার্শপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।যাদের অন্যকিছুর নেশা আছে, যেমন মদ্যপানে আসক্ত ব্যক্তি যদি ঘুমের ঔষধ চায় তাহলে না দেওয়া উচিৎ কারন তাদের ঐ ঔষধেও নেশা হয়ে যাবে।
(৫)নীচের ঔষধগুলির মধ্যে ট্রায়যোলাম অনেক সময় শারীরিক ও মানসিক উত্তেজনা সৃষ্টি করে, আর যোলপিডেম ও ট্রায়াযোলাম দুটোই স্মৃতিশক্তির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
নিম্নলিখিত ঔষধগুলি ঘুমের জন্য ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয়ঃ
ডায়াযেপাম(Diazepam),ক্লোরডায়াযেপক্সাইড(Chlordiazepoxide),লোরাযেপাম(Lorazepam),ক্লোনাযেপাম(Clonazepam),নাইট্রাযেপাম(Nitrazepam),অক্সাযেপাম(Oxazepam),ফুরাযেপাম(Flurazepam),হ্যালাযেপাম(Halazepam),টেমাযেপাম(Temazepam)।
উপরের ঔষধগুলি সাধারনতঃ ঘুমের জন্য ব্যবহার করা যায়,নীচের গুলোর মধ্যে অ্যালপ্রাযোলাম,টেনশন বা প্যানিক অ্যাটাকে ব্যবহার করা যেতে পারে।বাকিগুলো অন্য কাজে ব্যবহার করা হয়।
অ্যালপ্রাযোলাম(Alprazolam),এস্টাযোলাম(Estazolam),ট্রায়াযোলাম(Triazolam),মিডাযোলাম(Midazolam),কোয়াযেপাম(Quazepam)ইত্যাদি।
এছাড়া আরেকটা গ্রুপ ঔষধ এখন পাওয়া যায় যার নাকি নেশা করার প্রবনতা অনেক কম। সেগুলি হল,যোপিক্লোন(Zopiclone),যোলপিডেম(Zolpidem),যালেপলন(Zaleplon)ইত্যাদি।
উপরের প্রত্যেক ঔষধের অপব্যবহার বা নেশা করার প্রবনতা কম বেশী করে আছে।
সবচেয়ে ভাল ঘুমের ঔষধ বলা খুব শক্ত উপরের কারনগুলির জন্য।তবে আমার মনে হয় লোরাযেপামই বোধহয় সবচেয়ে ভাল। কারন, এটাতে ঘুম সাধারনতঃ ১৫ থেকে আধঘন্টার মধ্যে আসে,ঘুমটা ৬ থেকে ৮ ঘন্টা পর্যন্ত্য হয়,সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর আর ঘুমের ভাব বিশেষ থাকে না।এটা লিভার খারাপ থাকলেও দেওয়া যেতে পারে,অবশ্য কিডনীর গন্ডগোলে সাবধানে দিতে হয়।
আর যোপিক্লোন ঘুমের ঔষধটা সেদিক থেকে হয়ত লোরাযেপাম এর মত বা তার থেকে ভাল বলা যেতে পারে।
মনে রাখবেন সঠিক ঘুমের ঔষধের জন্য ডাক্তারই আপনাকে ঠিক পরামর্শ দিতে পারে।
আরো জানার জন্য দেখুনঃ www.csrmh.com
আয়ুর্বেদীয় Ashwagandha ঘুমের ভাল ঔষধ cont 01915717757
ReplyDelete